ভূতের বাপের ছেরাদ্দ (হাস্যরসাত্মক রচনা)
" আচ্ছা বলুন তো ,ভূতের বাপের ছেরাদ্দ খেতে কার না ভালো লাগে ?" " ওহে অনন্ত , এদিকে আর দুটো লুচি দিয়ে যা বাবা " - এমনি করেই ভোজসভা এগিয়ে চলে । লোকজন হইহই করে খাচ্ছে আর মেম বউ প্যান্টের ওপর শাড়ি পরে ওপরে নিচে দৌড়াদৌড়ি করছে । এমন দিন তো বার বার আসবেনা !
চলুন ঘুরে আসি ভূতের বাপের ছেরাদ্দ হচ্ছে সেই বাড়ি তে - বাড়ির ছাদে প্যান্ডেল হয়েছে , সেই যে বিদেশে থাকা ছেলের মেমবউ এসেছে , শাড়ি গুটিয়ে প্যান্ট পরে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করছে , অঢেল টাকা , তাই কিনা বাপ মরতেই ভারতবর্ষে এসে এ হেন শ্রাদ্ধের আয়োজন । আয়োজন টা ডলার ভাঙ্গিয়ে ইন্ডিয়ান মানি তে হোলো , তবে খাওয়াদাওয়ার ধুম দেখে মনে হচ্ছে এ যেন বিয়ে বাড়ি লেগেছে । মেমবউ তো আর বাংলা বলতে পারে না , তাই অনুবাদকের কাজ করছে তার বড়় দেওর অজয় ।
" আরে আলুর দম আরেকটু হয়ে যাক "- একজন হাঁক পারলে ভোজ সভায় -" কবজি ডুবিয়ে খাও ভাই, এ হেন ভোজ ভাগ্যে থাকলে জোটে ।" এ হেন মন্তব্য পাওয়া যাচ্ছে আশপাশ থেকে , বাপের মৃত্যুর দুঃখ ভুলে সবাই আনন্দে মেতেছে ।
"অজোয়" - মেমবউ তার দেওর কে ডাকলো -" হোয়্যার আর ইউ ?" - " আই আম হিয়ার বউদি , হোয়াট হ্যাপেন্ড ?" এ হেন ইংলিশ বলিয়ে দেওর কাজ চালিয়ে নিচ্ছে , কিন্তু মেম বউএর শ্বশুর বাড়ির লোকজন তটস্থ হয়ে আছে , এই বুঝি ইংরাজি বলতে হয় !
মেমবউ কিন্তু ভারি সাধাসিধে , কাউকে হেনস্থা করছে না , শ্বশুরের শ্রাদ্ধে সকলকে পেট পুরে খাওয়াচ্ছে ।
" তা বলি এরা আপনার হয় কে ?" এমন প্রশ্নের মুখে পড়লো অজয় - " আজ্ঞে আমার জাঠতুতো দাদার নিজের কাকিমার " - " থাক থাক আর বলতে হবে না "- বলে উঠলো খাইয়ের দল। " আজ্ঞে অনেক দুরের সম্পর্ক "- বললো অজয় ।
" ঠিক আছে চললাম ভাই ", -পেট পুরে লুচি , মণ্ডা মিঠাই , আলুর দম খেয়ে দু হাত ভরে আশীর্বাদ করে গায়েব হোলো তারা । এরপর আবার মৎস্য মুখের খাওয়াদাওয়া আছে ।
মৎস্যমুখের দিন লোকজন খেতে বসলে মেমবউ বললে " প্লিজ অর্ডার হোয়াট এভার ইউ লাইক টু হ্যাভ , ডোন্ট বি শাই " - কাঁচুমাচু লোকজন ইংরাজি বলতে গিয়ে খাবি খেয়ে হয়রান - অজয় কেই তারা খাড়া শিখণ্ডী করেছে , যত ইংরাজি সব বাংলা করে বলে দিতে হচ্ছে তাকেই ।" আপনাদের যা যা ভালো লাগে চেয়ে নেবেন , লজ্জা করবেন না "-হাত জোড় করে বলল অজয় ।
দুদিন ধরে ধকল তাদের কম যায়নি - মেম বউদি কে কলকাতা দেখানো , বাড়ির লোকের কৌতুক সামলানো , হুরমুরিয়ে কেটে গেলো তিনেক দিন । আজকের ভোজসভা শেষ হলে সে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে -" হ্যালো ব্রাদার উড ইউ লাইক টু সিট উইথ মি টু ইট ?" - অজয় আর কি করে ? নিজের বউ এর কটকটে দৃষ্টির সামনে ভালোমানুষের মতো মেম বউদির পাশেই খেতে বসলো সে ।
ফর্সা ফুটফুটে মেমসাহেবটির গায়ের রঙ যেন অজয়ের বউকেও হার মানায় । এই বার আরেক সমস্যা হোলো - মেম বউ তার জা , মানে অজয়ের বউ কে বলে উঠলো -" আর ইউ ফিলিং জেলাস ডিয়ার ?" - অজয়ের বউ তো গর্জে উঠলো - " নো নো , নো জেলাসি " - ইংরাজি খুব বেশি না বললেও শিক্ষিত সে । বুঝতে বা অল্প উত্তর দিতে পিছপা হয় না । হঠাৎ ই সে অজয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো -" আই উইল কিল ইউ " - আর মেম জা তো হেসেই কুটিকুটি !
অজয়ের ভাই সুজয় এবার একটু সাহস করে বলল " শি ইস বিউটিফুল , সো ফ্র্যাঙ্ক !" অজয় বেচারা কোনওরকমে আহারপর্ব সমাধা করলে , কথায় বলে যার আয়োজন তার ভাত জোটে না ।
মেম বউ বাঙালি রান্নার ঝাঁঝের চোটে খেতে বসে নাকের জলে চোখের জলে এক হোল , শেষে টিস্যু পেপার ফেলে শাড়ির আঁচল দিয়ে জল মুছতে হোল । সে এক বিরল দৃশ্য !
পরের দিন এয়ারপোর্টে ফ্লাইট ধরতে যাবার আগে মাথায় ঘোমটা টেনে , পায়ের কাপড় উঁচু করে গুরুজনদের প্রনাম করতে ভুললো না মেম বউদিমনি । " নাইস এক্সপিরিএন্স , বলে ফস করে সিল্কের শাড়ি খুলে হাতে নিয়ে জিন্সের প্যান্ট আর টপ পরা অবস্থায় ব্যাগপত্র গুছিয়ে রওনা হোলো। সবাইকে হৃদয় কাঁপিয়ে বলে গেলো -" মিট ইউ সুন , এগেইন " । সবাই মিষ্টি হেসে টাটা করলো । সঙ্গে চলল তার বাঙালি স্বামী ।
ভূতের বাপের ছেরাদ্দ অজয়ের পরিবারের ইতিহাস হয়ে থেকে গেলো ।
Comments
Post a Comment