জগা ভূতের গপ্পো (অহেতুকি রচনা)


 জগা জন্ম থেকেই ভূত । তার বাপ মায়ের মুখ সে কখনও দেখেনি । ছোট একটা পেয়ারা গাছে , বড় একটা বাগানে তার বাস । যাদের বাগান তারা অবশ্য জানে না জগার কথা । জগা হাওয়ায় ভেসে ভেসে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায় ।একদিন সে গেলো রথতলার মাঠে । মাঠে ছেলের দল ফুটবল খেলছে ।সেও ঝুপ করে আকাশ থেকে মাঠে নামলো ফুটবল খেলতে ।


ছেলেরা একটু অবাক হোলো বটে ,বলটাকে নিজে থেকে এপাশ ওপাশ হতে দেখে । তবে ব্যাপারটাকে তেমন আমল দিলো না তারা , নিজেরা হুড়োহুড়ি করতেই ব্যাস্ত । একটু খেলার পর জগা গেলো গ্রামের পুকুরে মাছ ধরতে ।সে তো ভূত , তাই ছিপ তার লাগে না । একেবারে পুকুরে ডুব দিয়ে চারটে রুইচারা তুললো সে । তারপর মাছগুলো কচকচ করে খেয়ে আবার উড়ে চললো পেয়ারা গাছের দিকে । আজকে সকালের মত উড়ান শেষ । দুপুরে একটু ঘুমিয়ে আবার সন্ধ্যেবেলা অনেক কাজ রয়েছে তার ।

জগার ঘুম ভাঙল যখন, তখন সন্ধ্যে ৭টা । জগা ঝুপ করে পেয়ারা গাছ থেকে নেমে হাঁটা দিলো ।কোথায় একটা যেন যাবে ভেবেছিলো সকালে , এখন ভুলে গেছে , সে ভাবল -" যাই গ্রামের নাটমন্দিরটায় , ওখানে হরিনামের আসর বসেছে ।"

নাটমন্দিরে গিয়ে জগা মানুষদের থেকে একটু দূরত্ব রেখে বসলো । বেশ লাগছে হরিনাম শুনতে । মানুষ মরার পর সগ্গলাভের আশায় হরিনাম শোনে , জগা ভাবল - " তাহলে আমি তো ভূত , দেখি যদি হরিনাম শুনে একটু মানুষ জন্ম পাওয়া যায় , তাহলে বিয়ে থা করে সংসারি হওয়া যাবে । একা একা আর ভালো লাগে না ।"

প্রায় ১ ঘণ্টা কেটে গেছে । হরিকীর্তন শেষ হোলো । জগা এবার উঠে পুকুর পাড়ের তালগাছটার ওপর তার চেনা এক ভূত্নির সাথে দেখা করতে গেলো । জগা কে দেখে ভূত্নি বলল -" পেন্নাম হই গো জগা , বলি চললে কোথায়?"
জগা -" হরিনাম শুনছিলাম গো , মানুষ জন্ম পাওয়ার আশায় , যদি পাই তো তবে বিয়েথা করে সংসারি হই ।"
ভুত্নি - " তাই নাকি , তাহলে আমিও যাবো শুনতে , মানুষ হবো , বে থা করবো ,কেমন মজা হবে বলো ।"
জগা - " আগে তোমার খবর বলো ? আজ মাছটাছ কিছু খেতে পেলে নাকি? আমি তো আজ দুপুরে জমিয়ে চারামাছ খেলাম ।"
ভূত্নি-" না গো , আজ দিনের বেলাটা ঘুমিয়েই কাটালাম । খাইনি কিছু ।"
জগা -" আচ্ছা , কাল থেকে তোমাকে মাছ এনে দেবো পুকুর থেকে ।"
ভূত্নি -" কিন্তু , শুনেছি হরিঠাকুর নিরামিশ খাওয়া পছন্দ করেন , মাছ মাংসের তিনি বিরোধী !"
জগা -" কিন্তু , তাহলে খাবো কি ? আমরা যে ভূত !"
ভূত্নি -" তা বটে , কাল আমিও তোমার সাথে যাবো কেত্তনের মন্দিরে , দেখি কেমন লাগে ।"
জগা -" বেশ বেশ তাই হবে ।"

তারপর থেকে জগা ভূত আর ভূত্নি দুজনেই রোজ সন্ধ্যেবেলা নাটমন্দিরে হরিনাম শুনতে যাওয়া শুরু করলো , এই ভাবে বেশ অনেকদিন কাটলো , দুজনের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি হোলও ।

ওদিকে শ্রী হরি তাদের নিয়মিত খেয়াল রাখতে রাখতে একদিন জগাকে স্বপ্ন দিয়ে ফেললেন । তিনি বললেন -" আমি তোমাদের ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়েছি । তোমরা মানুষ জন্ম পাবে এবার । তখন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার কোরো ।  আমি তোমাদের দিন চলার মতো কাজ জুটিয়ে দেবো । থাকবো তোমাদের পাশে । তোমাদের সন্তান সন্ততিরাও মানুষ হয়েই জন্মাবে । এইরূপে তোমরা আমার লীলা আস্বাদন করো । আয়ু ফুরলে আমি তোমাদের গো লোকে নিয়ে যাবো , ভালো কর্মের ভালো ফল ।"- বলে শ্রী হরি অদৃশ্য হলেন । জগার ঘুম ভেঙ্গে গেলো , সে ভূত্নির কাছে গিয়ে সব বললও ।

তারপর অনেকদিন কেটে গেছে , এখনো তারা খুশিতে সংসার করছে , মনুষ্য শরীরে, সন্তানদের নিয়ে - এই ছিল ' জগা ভুতের গপ্পো '।

Comments

Popular posts from this blog

ONCE IN A SUNNY MORNING(Poem)

A Memorable Marriage

DEATH OF BHOKU- My Pet Parrot