মহালয়া - আমার অনুভূতি
কাশের দোলায় পুজোর গন্ধ । নীল আকাশে পেঁজা তু্লোর মত মেঘ । আর কিছুদিন পরেই আকাশবানী তে প্রচারিত হবে বীরেন্দ্রকৃষ্ন ভদ্রের মহালয়া । শুরু হবে দেবীপক্ষ । মা আসছেন ।
পুজোয় নতুন জামার আনন্দের পাশাপাশি মন কেমন করা একটা অনুভুতি । যা বোধহয় আজ অবধি কেউ ভাষায় প্রকাশ করতে পারেনি । " শুভ্র শঙ্খ রবে " এক অনন্য অনুরণন । অল্প কটা দিন কেমন ভাবে কেটে যায় তা বোঝার উপায় নেই । দেবী দূর্গার বোধনের সাথে সাথে গতিশীল আনন্দময় হয়ে ওঠে জীবন । দেশ কালের গণ্ডি পেরিয়ে তার ব্যাপ্তি আজ সারা বিশ্বময় । যার অল্প কিছু সম্বল সেও আনন্দে আবেগে আত্মহারা । মা দূর্গার আশীর্বাদে ধরনী সেজে ওঠে নতুন সাজে । চারিদিকে শুধু পূর্ণতার আনন্দ ।
এমনি কিছু মুহূর্তে মনে পড়ছে বাবিমনির (বাবা) কথা । আজীবন সঙ্গীত নিবেদিত প্রান সেই মানুষটি ছিলেন মহালয়ার পাগল শ্রোতা । ভোর ৪ টে বাজলেই জোরে চালিয়ে দেবেন রেডিও । নিজে তো শুনবেনই, সঙ্গে সারা বাড়ির লোককেও মাতিয়ে দেবেন " বাজলো তোমার আলোর বেণু " রবে, মাতাবেন সারা ভুবন ।
আজ তিনি আমাদের মধ্যে নেই । তাই মহালয়ার সকালে আমি আর মা সবচেয়ে আগে মনে করবো তাঁকে । যার সংস্কৃতিময় আত্মা আজও অমর হয়ে আছেন তার মধুরাবেগমণ্ডিত কণ্ঠ স্বরে , তার গাওয়া গানে ।
একটা মাত্র হারমোনিয়াম কে সঙ্গী করে মগ্ন হতেন তিনি দেবীর আরাধনায় - " জাগো দুর্গা , জাগো দশপ্রহরনধারিনী " - তাঁর বজ্রগম্ভীর কণ্ঠে ছোট থেকে শুনেছি আর বারবার মুগ্ধ হয়েছি , শিখেছি অনেক ।
নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি আজীবন সঙ্গীত ও শিল্পকলা চর্চায় ব্রতী থাকতে । মূলত বাবা ও মায়ের উৎসাহ ও উদ্দীপনাতেই আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পারছি আমার সৃজনশীলতা কে । আশায় বুক বাঁধছি , যেন সকল প্রতিকূলতাকে জয় করে সমুদ্রের ঢেউ এর মত সগর্জনে ছড়িয়ে পরতে পারি বিশ্বব্যাপী ।
বাবার প্রতিভা , তাঁর সঙ্গীতচর্চা , ক্ষুরধার লেখনী , কি বাংলা , কি ইংরাজি - সবকিছুই যেন মিশে আছে কাশফুলের দোলা আর মায়ের আগমনের সাথে - বাবিমনি হইহই করে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখতো আর ভালোবাসতো পাঞ্জাবী পরে অঞ্জলি দিতে অষ্টমীর দিন ।
এই সবই এখন স্মৃতি - পূজো আসবে যাবে প্রত্যেক বছর ,মাতবে সারা বিশ্ব । কিন্তু সেই ভোর ৪ টের সময় ঘুম থেকে উঠে জোরালো আওয়াজে রেডিও চালিয়ে দেওয়া মানুষটাকে আর পাবো না । থাকবে পিছুটান , হয়তো নতুন কোন জন্মে তিনি বেড়ে উঠবেন , আবার সঙ্গীত কে আশ্রয় করে কাঁপিয়ে তুলবেন সারা দুনিয়া । যাবতীয় গ্লানি দূর করে নিজেকে করে তুলবেন মহিমামণ্ডিত । এই আশাতেই বুক বেঁধেছি ।
মহালয়ার পুণ্য প্রভাতে চোখের জলে স্মরণ করবো তাঁকে । এই হোলো আমার নিঃশব্দ অনুভূতি ।
Comments
Post a Comment