তিতিরের রূপকথা (ভূতের গল্প)


খসখস করে লিখে চলেছে তিতির।পরীক্ষা চলছে।ঘন্টা পড়তে তখনো ৬০ মিনিট মানে ১ ঘণ্টা বাকি।আজ বাংলা পরীক্ষা। এমনিতেই ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্রী বলে তিতির বাংলায় কাঁচা। তার ওপর কঠিন কঠিন সব প্রশ্ন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাত চালাতে হবে, না হলে লেখা শেষ হবেনা। লিখতে লিখতে হঠাৎ ই তিতির দ্যাখে তার কলম থেকে কালির ফোঁটা পড়ছে পাতায়।পাতার লেখা গুলো ক্রমশ অপরিস্কার হয়ে যাচ্ছে। তিতিরের কলমটা যেন কেমন। শেষ যে কালির ফোঁটাটা খাতায় পড়লো ,তিতিরের মনে হতে লাগলো সেটা যেন নড়াচড়া করতে আরম্ভ করেছে। ঘড়ি তে  সময় দেখতে ভুলে গেলো তিতির,মন দিয়ে সে কালির ফোঁটার নড়াচড়া দেখছে। একি সত্যি ভূত নাকি? ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ওইটা হাসছে তিতিরের দিকে তাকিয়ে। 

ভূত টা হথাত বলে-" কি গো তিতির,যাবে নাকি আমার সঙ্গে আমার দেশে?" তিতির কোন ও কিছু না ভেবেই হাত বাড়ায় ,কালির ভূত ওর হাত ধরে হ্যাঁচকা টান মেরেছে। সঙ্গে সঙ্গে তিতির স্কুলের বেঞ্চি ছেড়ে,পরীক্ষার খাতা ভেদ করে গিয়ে পড়লো ভুতেদের রাজ্যে। কিন্তু একি? এখানে তো সব ভুতগুলো কালির ফোঁটার মতই দেখতে! ইচ্ছেমত ওরা আকার পালটায়। তিতির ওই ভূত টার হাত ধরে ওদের রাজ্যে বেড়াতে শুরু করল।

তিতির-"আচ্ছা তোমরা স্কুলে যাও ? তোমাদের কেউ বকেনা? পড়াশুনা করো ? "

ভুত টা বলে-" নাহ, আমাদের স্কুল নেই,পড়াশুনাও নেই , আমরা হলাম হাওয়া, হাওয়া খেয়ে বেড়ানো আমাদের কাজ।" " তোমার বুঝি রোজ স্কুল থাকে? কি এতো পড়াশুনা কর?এখানেই থেকে যাও দেখবে কত মজা!"

তিতির-" কিন্তু সবাই খুজবে যে,পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই তোমার সাথে চলে এলাম, এটা ঠিক হল না।"

এদিকে স্কুলে বাংলা ক্লাসে হুলুস্থুল কাণ্ড। তিতির কে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। যে বেঞ্চ টায় বসে সে পরীক্ষা দিচ্ছিল,দিদিমনি হঠাৎ দ্যাখেন সেখানে কেউ নেই, বাংলা খাতার পাতা গুলো পরে আছে। কোথায় গেলো তিতির?  

এদিকে ভূতের দেশে মজায় ঘুরছে তিতির। ভূতের দেশ টা ভারী অদ্ভুত! এখানে দিন ও নেই,রাত ও নেই,কেমন ধারা হাল্কা আলো ফুটে রয়েছে চারিদিকে।

ভুত টা এবার তিতিরের হাত ধরে একটা নদীর ধারে নিয়ে এলো ।কি আশ্চর্য ! নদীটায় জল নেই ! হাল্কা আলো দিয়ে তৈরি ! তিতির একটু জল খেতে চায় । 

ভূত টা বলে-" হে হে, ভুলে গেছি,তুমি তো মানুষ , তোমার তো জলতেষ্টা পাবেই।" বলেই ভূত টা তিতিরের মাথায় হাত দেয়। তিতির আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরে। একটু পরে ঘুম ভাংলে সে দ্যাখে তার সঙ্গী ভূত টার সাথে আরও অনেক কালো কালো ভূত ওখানে জড়ো হয়েছে।

তিতির বলে-" হ্যাঁ গো, তোমরা  কি আমায় কামড়ে দেবে গো ?"

ভূত গুলো বলে-" না গো , আমরা তেমন ভূত নই গো , আমরা কারো ক্ষতি করি না , তুমি ভালো ভূতের দেশে এসে পড়েছ ।"

তিতির হঠাৎ কেঁদে ফেলে বলে-" আমি মায়ের কাছে যাবো , আমাকে যেতে দাও প্লিজ ।"

যে ভুত টার সাথে সে এসেছিলো , সে বলে-" এখানে এলে ফিরে যাওয়া যায় না গো আর । তুমি থাকো না এখানে আমাদের বন্ধু হয়ে , এখানে স্কুল নেই , পড়ার চাপ নেই , খিদে নেই , তেষ্টা নেই , তেমন ভালো ব্যাবস্থা যে পৃথিবী তে নেই গো ।"

তিতির-" এই জায়গা টার নাম কি গো ? এটা কি অন্য কোনও গ্রহ? আমি ভূগোলে অন্য গ্রহের কথা পড়েছি , এটা নিশ্চই অন্য কোনও গ্রহ !"

ভূত গুলো একসঙ্গে বলে অথে-" হ্যাঁ গো , এটা একটা অন্য গ্রহ , এটা ছায়াগ্রহ , এর নাম রাহু ,তাই আমরা মারা যাওয়ার পর এই গ্রহে ছায়া হয়ে থাকি ।"

তিতির এবার কান্নাকাটি শুরু করে । কি করে ফিরবে সে ? তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায় ! 

সে বলে-" কিন্তু আমি তো মরে যাইনি , তাহলে আমি এখানে এলাম কি করে ?"

ভূত গুলো একে অন্যের দিকে তাকায় । বলে- " সত্যি তো ,তিতির তো মারা যায়নি ! আমরা তো মরে গিয়ে এখানে এলাম ।"

তখন তিতিরের সঙ্গী ভূত টা বলে -" আমি তিতিরের পরীক্ষার খাতা থেকে ওকে এখানে নিয়ে এসেছি । ও পরীক্ষায় ভালো লিখতে পারছিলো না , তাই ভাবলাম আমাদের দেশ টা ঘুরে যাক , এখানে পড়াশুনার চাপ নেই , তাই আর কি !"

অন্য ভূত গুলো বলে-" আমরা তিতিরের ক্ষতি চাইনা , ও যদি মরে যেতো তাহলে হয়তো আমাদের সাথে থাকতে পারতো , কিন্তু ওকে পৃথিবীতে ফিরতে হবে , মা বাবার কাছে ।"

তিতির বলে-" কিন্তু বাড়ি ফিরলেও তো আবার স্কুলের চাপ , আর ভালো লাগে না ।"

ভূত টা বলে-" চলো গো , তিতির এবার তোমাকে পৃথিবীতে পৌঁছে দিয়ে আসি , এতক্ষনে নিশ্চই স্কুলে সবাই তোমাকে খুঁজতে শুরু করেছে , পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেছে , তোমার মা বাবা নিশ্চই তোমাকে খুঁজছেন ।"

এবার সে তিতিরের হাত ধরে হাওয়ায় ভেসে পড়ে । হাল্কা হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে তিতির আরামে ঘুমিয়ে পড়ে ।যখন ওর ঘুম ভাঙে তখন ও স্কুলের ছাদে শুয়ে আছে । চোখ খুলে দ্যাখে ওর স্কুলের দিদিমনি রা, বন্ধুরা , মা , বাবা , পুলিশ সবাই ওকে ঘিরে আছে । তিতির উঠে বসে । 

দিদিমনি বলে-" এই তো ঘরে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিলি , ছাদে এলি কখন ? আমার চোখের সামনে দিয়ে উধাও হয়ে গেলি কখন ?"

তিতির চুপ করে থাকে , তিতিরের মা তিতির কে কোলে নিয়ে বলে-" চল , আর পরীক্ষা দিতে হবে না, এ তো  টার্মিনাল পরীক্ষা , ফেল করলেও অসুবিধে নেই , ফাইনাল পরীক্ষা ভালো করে দিলেই হবে ।"

তিতির মা এর কোলে চড়ে ট্যাক্সি তে ওঠে । স্কুলের সবাইকে সরি বলে বাবা মা এর সাথে বাড়ি ফেরে তিতির । স্কুলে তখন ও তিতির কে নিয়ে আলোচনা চলছে । রহস্য টা যে কি তা বুঝে উঠতে পারে না কেউ । বাড়ি তে ফিরে রাত্রে মা এর পাশে শুয়ে সব খুলে বলে তিতির । মা কিন্তু তিতিরের কথা বিশ্বাস করেন । বলেন-" থাক রে , এসব কথা সবাইকে বলিস না , কেউ বিশ্বাস করবে না । আজ ভাগ্যিস তুই দিদিমনির সামনে থেকে উধাও হয়েছিলিস , তাই বেঁচে গেলি । একা ক্লাস থেকে বেরোলে আর দেখতে হত না ।"

তিতির বলে-" মা , মানুষ মরে ভূত হয় কেন ?'

মা বলেন-" ওসব কথা থাক না তিতির , তুই তো ভালোভাবে আমার কোলে ফিরেছিস , এই অনেক ,তুই যেখানে গিয়েছিলি সেখান থেকে কেউ ফেরে না ।"

তিতির ওর বন্ধু ভূত কে মনে মনে বলে-" থ্যাঙ্ক ইউ , মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড ।"

Titirer Roopkotha-


Comments

Popular posts from this blog

A Memorable Marriage

ONCE IN A SUNNY MORNING(Poem)

DEATH OF BHOKU- My Pet Parrot