মুক্তি (কল্পকাহিনী)


 সামনের বছর মাধ্যমিক দেবে অন্বেষণ । পড়া শুনায় সে খুবই ভালো । অঙ্ক তার প্রিয় বিষয় । অন্বেষণের বাবা অঙ্কের প্রফেসর । মা গৃহিণী । মহাকাশ গবেষণায় অন্বেষণের খুব আগ্রহ । এই বিষয়ের ওপরেই বড় হয়ে পড়াশুনা করতে চায় সে । বাবা তাকে ছোটো একটা টেলিস্কোপ কিনে দিয়েছেন । বাড়ির বারান্দা থেকে আকাশের গ্রহ নক্ষত্র নিরীক্ষণ করে সে ।

মা বাবার কাছে সে শুনেছে , তার দাদা সায়ন্তনের যখন ১০ বছর বয়স , তখনি বাড়ির ছাদে খেলা করতে গিয়ে হারিয়ে যায় সে । বাড়ির ছাদ থেকে যে সে কোথায় উধাও হয়ে গেলো তার হদিশ পুলিশও করতে পারেনি । সেই সময় অন্বেষণ খুবই ছোট ছিল ।

একদিন সন্ধ্যাবেলায় বারান্দা থেকে মহাকাশ নিরীক্ষণ করছিলো অন্বেষণ । ছাদে যেতে মা বারন করেন। তাদের বারান্দাটা অনেক লম্বা । বারান্দার শেষ প্রান্তে অনেক ফুলের গাছ টবে লাগানো আছে ।  কিছুক্ষণ টেলিস্কোপে চোখ রাখার পর অন্বেষণ বারান্দায় কিছুটা হাঁটা হাঁটি করবে বলে চেয়ার ছেড়ে উঠলো । হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ ই তার চোখে পড়লো জবা গাছের টবের পাশের মাটিতে কিছু একটা জিনিষ চকচক করছে । অন্বেষণ কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে যায় । জিনিষটা একটা গোলচে ধরনের পাথর । অন্বেষণ হাতে তুলে নিয়ে দেখে পাথরটা খুব গরম আর সেটা থরথর করে কাঁপছে । যেন জীবন্ত ! হাতে নিয়ে অবাক হয়ে দেখে সে । তারপর সেটা নিয়ে বাবা কে দেখায় সে । বাবা দেখে বলেন -"এটা কোনো সাধারন পাথর নয় , এটা অতনুকে দেখাতে হবে । চল যাই এখুনি ।"

অতনু হলেন অন্বেষণের বাবার বন্ধু , তিনি বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণাতে লিপ্ত আছেন । অন্বেষণদের পাশেই তার বাড়ি । অন্বেষণ ওনার কাছেই বিজ্ঞান পড়ে ।

" স্যার , আজকের এই ঘটনাটা খুব আশ্চর্য জনক ।"- বলে অন্বেষণ , সে বাবার সাথে অতনু স্যারের বাড়িতে এসেছে । পাথরটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে অতনু স্যার সেটাকে তার নিজস্ব ল্যাবে নিয়ে এলেন । অন্বেষণ ও তার বাবা ও এলেন সঙ্গে । বললেন সব কথা ।
"একটু রিসার্চ করা দরকার এটা নিয়ে "- বলেন অতনু স্যার ।

টেবিলে রেখে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখে বললেন -" পাথরটা সিলিকন জাতীয় জিনিষ দিয়ে তৈরি , তাই চাঁদের আলো পড়ে চকচক করছিলো । সেই মৃদু স্পন্দন টা এখনও হয়ে চলেছে । যেন জীবন্ত !"
অন্বেষণের বাবা মাথা নাড়লেন ।

অতনু স্যার আরও কিছু বলতে যাবেন সেই অবস্থায় অন্বেষণ হঠাৎ চোখ বন্ধ করে বলতে শুরু করলো-" আমি সায়ন্তন বলছি । পৃথিবীর হিসাবে আজ থেকে ১৬ বছর আগে আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম । এখন আমি মৃত । আমাকে ছাদে খেলা করার সময় সুদুর নক্ষত্রলোক থেকে আসা এক ইলিয়ন গোষ্ঠী তাদের উড়ন চাকী তে বন্দী করে ওদের গ্রহে নিয়ে যায় । আমার ওপর নানা রকম গবেষণা চালায়। এই ইলিয়ন গোষ্ঠী বিজ্ঞানের থেকেও তন্ত্রে বেশি উন্নত । তবে অধম্নায় তন্ত্র কে এরা কাজে লাগায় ।  আমার ওপর নানারকম গবেষণা চালাবার পর আমি মারা যাই । কিন্তু দেহ ধারন করে তোমাদের দেখা দেবার ক্ষমতা আমার ওরা নষ্ট করে দিয়েছে । আমার দেহটাকে ওরা খেয়ে ফেলেছে । দে আর ম্যান ইটার টু । আমার আত্মাকে  এই পাথরটায় বন্দী করে পৃথিবীতে ফেলে দিয়ে গেলো । ওদের গ্রহে সময় খুব দ্রুত গতিতে চলে ,পৃথিবীর হিসাবে তা অনেকদিন । আমি আমার ভাই অন্বেষণের মাথায় আমার চিন্তাতরঙ্গ পাঠিয়ে আমার বক্তব্য জানালাম । তোমরা আমাকে মুক্ত কর এই পাথর থেকে । "
এইটুকু বলে অন্বেষণ অজ্ঞান হয়ে গেলো । বাবা আর অতনু স্যার অন্বেষণকে ধরাধরি করে শুয়ে দিলেন । ততক্ষণে মা ও চলে এসেছেন সেখানে । সব শুনে তিনি বললেন - " পাথরটা আমাকে দাও ", অতনু স্যার মা এর হাতে পাথর টা দিতেই মা মাটিতে আছড়ে ফেলে সেটাকে ভেঙ্গে ফেললেন । একটা জোরালো স্পন্দন হল পাথর টায় , তারপর একটা ধোঁয়ার মত কি যেন বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে ।

অন্বেষণের জ্ঞান ফিরে এলো তখনি। সে উঠে বসে সবকথা শুনে বলল -" মা, দাদা কে আমি ফিরে পেতে চাই । "
মা শান্তস্বরে বললেন -'' সায়ন্তনের শ্রাদ্ধশান্তির আয়োজন করো । ওর আত্মার শান্তি হোক । তারপর আমি ওকে আবার গর্ভে ধারন করবো ।আবাহন করবো ওকে, অন্বেষণের ভাই হিসাবে।" বাবা চুপচাপ চোখ মুছলেন । তারপর তারা সবাই মিলে সায়ন্তনের শ্রাদ্ধশান্তির আয়োজন করতে গেলেন ।



Comments

Popular posts from this blog

A Memorable Marriage

DEATH OF BHOKU- My Pet Parrot

Basics of Drawing (technique)