কৃতজ্ঞতা (পিতাপুত্রের কাহিনী)
রাস্তার ওপরেই তরুন মুচির দোকান । ছোট কাঠের দোকানে সে জুতো সারায় আর নতুন জুতো তৈরি করে বিক্রিও করে । তারই একমাত্র ছেলে অরুন , ক্লাস ফাইভে পরে । তরুন মুচির স্ত্রী দুবছর হোল মারা গেছেন । ছোট্ট ছেলে কে নিয়ে একাই আছে সে । জুতোর পসার খারাপ নয় তার । বাবা আর ছেলের চলে যাচ্ছে মোটামুটি ।
তরুনের ইচ্ছা ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় জুতোর ব্যাবসা তৈরি করবে সে । খুব আশা নিয়ে দোকান টা চালাচ্ছে তরুন । জুতোর কাজ করে যখন ছেলেকে পাশে বসিয়ে কাজ শেখায় । ছেলে স্কুল থেকে ফিরে বাবার দোকান হয়ে বাড়ি ফেরে । তারপর পড়াশুনা করে ।
এইভাবেই কেটে যায় অনেক বছর । অরুন বড় হয়ে এম বি এ শেষ করে ব্যাবসা চালাতে শুরু করে । খুব বড় জুতোর শো রুম তাদের । পদশোভা । বাবা তরুন এখন নিশ্চিন্ত । ছেলে কে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া শিখিয়েছে সে , ছেলেই এখন ব্যাবসা চালাচ্ছে । তারা এখন খুব সুন্দর দোতলা বাড়ি তে থাকে । অভাবের দিন চলে গেছে । সবাই তাদের বাবা আর ছেলের উন্নতি নিয়ে আলোচনা করে । ছেলেকে নিয়ে অনেক আশা তরুনের ।
একদিন তাদের জুতোর দোকানে আশে ডালিয়া । ডালিয়া বিদেশ থেকে এসেছে , এন আর আই তারা । ডালিয়ার বাবা আর মা ভারতে এসেছেন ডালিয়া কে নিয়ে । এদেশে তাদের জমি জায়গা প্রচুর । তারই দেখাশোনা করতে এসেছে তারা । ডালিয়া জুতো কিনতে আসে অরুন দের দোকানে । আলাপ হয় অরুনের সাথে । অরুন তাকে জুতো পছন্দ করতে সাহায্য করে । খুশি হয় ডালিয়া ।
এরপর থেকে প্রায়ই পদশোভা তে আসতে থাকে ডালিয়া । অরুনের সাথে তার পরিচয় ক্রমশ গাড়ো হয় । তারা আলাদা দেখাও করে । ধীরে ধীরে প্রেম গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে ।
ডালিয়া ওর বাবা মা কে জানায় অরুনের কথা , বাবা মা খুশি হয়ে বিয়ের কথা বলেন । কিন্তু তাদের শর্ত হোল অরুন কে বিদেশে গিয়ে থাকতে হবে তাদের সাথে । ডালিয়া অরুন কে জানায় সে কথা । অরুন বলে , " আমি বাবা কে তোমার কথা বলেছিলাম , বাবা বলছিলেন তোমাকে বাড়ি তে নিয়ে যেতে । কিন্তু তোমার বাবা আর মা যে শর্ত দিয়েছেন তা মেনে নিয়ে বিদেশে থাকা সম্ভব নয় আমার পক্ষে । আমি বাবা কে ছেড়ে কোথাও যাব না । যাব না আমাদের ব্যাবসা ফেলে । বাবা অনেক কষ্ট করে আমাকে বড় করেছেন । যেখান থেকে তুমি জুতো কিনতে ভালোবাসো সেই পদশোভা আমার বাবার ই সৃষ্টি । তুমি বললে কি করে আমাকে বিদেশে চলে যেতে?" বলে অরুন চুপ করে যায় , ডালিয়া মেনে নিতে পারে না কঠোর বাস্তব কে , অরুন তার সাথে সব সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়ে চলে আসে বাবার কাছে । খুলে বলে সব কথা । বাবার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে । বাবার প্রতি ছেলের এই কৃতজ্ঞতা যদি সব ছেলেদের থাকতো তাহলে দেশ টা বোধহয় অন্যরকম হতো ।
অরুন বাবা কে হেসে জড়িয়ে ধরে -" না বাবা, ছেলেবেলার কথা আমি ভুলিনি , তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না , কক্ষনো না , কথা দিলাম "- বোধহয় এরই নাম সম্মান, কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসা ।
Comments
Post a Comment