একটি রূপক কাহিনী


 

এক যে ছিল বিশ্ব। সেখানে ছিলেন তিন শক্তি - সৃষ্টিকর্তা , প্রলয়কর্তা , পালনকর্তা । প্রলয়কর্তা সৃষ্টিতে প্রলয় এনে নতুন সৃষ্টির আবাহন করতেন , আর সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করতেন । পালনকর্তা পালন করতেন । সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করেছিলেন এক বিশ্ব । কিন্তু তার দায়িত্ব , তার সুবিধা ,অসুবিধা , তার কর্তব্যের পরিনাম কেউ বুঝেও বুঝলো না । পালনকর্তা দশ রূপে বিশ্বে অবতরন করতেন । একেক পরিস্থিতিতে একেক রূপ । কিন্তু প্রলয়কর্তাকেও নানান রূপে একেক সময়ে আস্তে হত বিশ্বে । কারন , সময় যত এগোলও , জটিলতা , সৃষ্টির ক্রমবিবর্তন ততো গভীর আকার নিলো ।

অথচ , সৃষ্টিকর্তার রহস্য অধরাই রয়ে গেলো । তার কত রূপ , কি রকম বিক্রিয়ার ফলে তার জন্ম , সেই নিয়ে কেউ ভাবলোও না । যার থেকে শুরু , সবাই ভুলল তাকে ।

তাই, সৃষ্টিকর্তা কিভাবে সৃষ্টিতে ন্যাস ও প্রতিন্যাস করলেন , কি কি রূপে তার অংশরা বিশ্বে অবতরন করলেন , তা একটু জানার দরকার । 

সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং সৃষ্টি করলেন এক বিদূষী নারীকে । তারই পরিপূরক হিসাবে । কিন্তু সেই মহীয়সী নারী তাকে গ্রহন করলেন নিজের পিতা হিসাবে । আর সৃষ্টিকর্তা সেই নারীকে গ্রহন করলেন জায়া ,জননী , দুহিতা হিসাবে । তারপর সেই বিদুষী নারী তার প্রথম জাগ্রত অনুভুতিতে হলেন লজ্জিত । সৃষ্টিকর্তার থেকে তিনি দূরে পলায়ন করতে গেলেন ।

আজব ব্যাপার এটাই , সৃষ্টিতে ধ্যানমগ্ন সৃষ্টিকর্তা স্থির রইলেন , কিন্তু তার শরীরের মস্তক অংশ থেকে সৃষ্টি  হতে থাকলো আরও অনেকগুলি মস্তক । বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়লো তার সতর্ক দৃষ্টি । মস্তকগুলি সৃষ্টি হল , কিন্তু তাদের লয় হোলো না ।

সেই বহুমুখী মস্তকগুলি দেখতে যেন একইরকম । আলাদা , কিন্তু একই দেহ থেকে তাদের উৎপত্তি । তাই সৃষ্টি যত এগোলো , সেই মস্তকগুলি বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন ছদ্মবেশে নিজেকে প্রকাশ করলো । তার প্রভাব কি হোলো ? সেই গল্পই আজ বলবো আপনাদের । 

প্রথমে সেই বিশ্বে আবির্ভূত হলেন এক যোগী পুরুষ , শিশুরূপে গরীবের আস্তাবলে । বড় হয়ে তিনি মানুষকে পথ দেখালেন , শান্তির পথ , ত্যাগ ও সহনশীলতার পথ । ক্ষমার পথ । 
তার ছিল লম্বা দাড়ি , কুঞ্চিত লম্বা কেশ , সুদর্শন তিনি , তার জীবনে হোল ধৈর্যের পরীক্ষা । কঠোর সংগ্রামের মধ্যে দিয়েও তিনি মানুষকে করলেন উজ্জীবিত ।

এই যোগীপুরুষের সৃষ্টি হয়েছিলো সৃষ্টিকর্তার পশ্চাদ্মুখী মস্তক থেকে । ঈশ্বরের পুত্ররূপে । সেই বিশ্বটির পাশ্চাত্য দেশগুলিকে তিনি পথ দেখালেন । দেহত্যাগের পরেও তিনি হলেন চির অমর । বলতে পারেন কে তিনি ?

এবার আসি সৃষ্টিকর্তার সম্মুখের বামমুখী মস্তকটির কথায় । সেই মস্তক থেকে প্রকাশ হোলো এক সৃজনশীল মহামানবের । সঙ্গীত , কাব্য , প্রেম প্রভৃতি চর্চায় প্রাচ্যবিশ্বের এক দেশকে অনুপ্রানিত করলেন তিনি । তার রচনায় ধরা দিলো জীবনের পূর্ণতা । তিনি লম্বা দাড়ি ও কেশ সম্পন্ন সুদর্শন এক পুরুষ । বলুন দেখি তিনি কে ?

এবার আসি সৃষ্টিকর্তার ডানমুখী মস্তকটির কথায় । সেই ডানমুখী মস্তক ছিল বড়ই রহস্যময় । তার থেকে জন্ম নিলো এক প্রভাবশালী পুরুষ । বহু স্ত্রী সম্পন্ন , প্রাচ্যেরই আর এক ধর্মভাবাপন্ন দেশে । তিনি প্রতিশোধ নিলেন  তারই আর এক অংশের হয়ে । সেই যে কবির কথা বললাম , সেই বামমুখী মস্তক থেকে উৎপন্ন , তারই পুনর্জন্ম হোল ডানমুখীর মধ্যে দিয়ে । তার সমস্ত ইতিবাচক শক্তি দিয়ে তিনি যে জীবন গড়ে তুলেছিলেন , তারই বিপরীত নেতিবাচক অংশটির প্রকাশ ঘটলো সেই প্রভাবশালী পুরুষটির মধ্যে ।

বিশেষ এক গোষ্ঠীকে তৈরি করলেন তিনি । ঝাঁপিয়ে পড়লেন পাশ্চাত্য বিশ্বের ওপর । নিলেন প্রতিশোধ ।
সৃজনশীল ব্যাক্তিটি বিদেশীদের দেওয়া একটি খেতাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন । যখন পাশ্চাত্য আক্রমন করেছিলো প্রাচ্যদেশটিকে । নৃশংসতার দ্বারা হত্যা করেছিলো অগনিত নরনারী ও শিশুকে । তারই  জমে থাকা আর্তনাদ ঠিকরে বেরোলো তার পরবর্তী জন্মে । নিশ্চই বুঝতে পারছেন কে তিনি ?

বিশ্রাম

এবারে আসি সৃষ্টিকর্তার মূল দেহসম্পন্ন  মস্তকটির কথায় । সেইটি জন্ম নিলো প্রাচ্য দেশেই । কিন্তু তার শিক্ষা শুরু হোল পাশ্চাত্যে । বড় হয়ে ওঠার পর তিনি ঘরে ফিরলেন দেশমাতৃকার আহবানে । তার বিদ্রোহ , দর্শন , ও আধ্যাত্মিকতা তাকে পরিনত করলো এক ঋষিতে । সেই বিদ্রোহী ঋষি উন্মোচিত করলেন সৃষ্টির এক নতুন দিক - দিব্য জীবন । মানুষই শেষ কথা নয় , আত্মার বিবর্তনের ফলে জন্ম নেবে এক দিব্য প্রজাতি । শুধু শরীর বা মস্তিষ্ক নয় , আত্মারও বিবর্তন হয়ে চলেছে খুব ধীর গতিতে । এই হোল মূল কথা ।

কি সহজ তাই না ? একটু ভেবে দেখুন তো এই ঋষি কে ?

এরপর আসি সৃষ্টিকর্তার এক পশুমস্তকের কথায় - সেই পশুমস্তক আপাত দৃষ্টিতে এক নিরীহ বন্য প্রানীর । কিন্তু তার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে বন্যতা । যার প্রকাশ হোলো এমন এক ব্যাক্তিতে যিনি আলোকচিত্র জগত ও অন্ধকার জগতকে হাতের মুঠোয় নিলেন । যিনি এখনও ক্রমশ বাড়িয়ে চলেছেন তার প্রতিপত্তি । ছদ্মবেশটি ধারন করে যিনি ভূমিকা পালন করছেন সমাজসেবীর ।

আশা করি বুঝতে পারছেন তিনি কে ?

এইভাবেই সৃষ্টিকর্তার প্রধান পাঁচটি মস্তকের ব্যাখ্যা আমি করলাম । আরও যেসব মস্তকগুলি সৃষ্টি হয়েছিলো , সেই বিদুষী দেবীর আকর্ষণে তাদেরও প্রকাশ হয়েছে । একই মুখাবয়ব সেইসকল অবতারদের ।

যে মস্তকটি ঊর্ধ্বমুখী , সেই মস্তক থেকে সৃষ্টি হয়েছিলো এক ব্রহ্মচারীর । রনে , বনে , জলে , জঙ্গলে - সকল বিপদে তার স্মরনে আমরা পাই ত্রান । তিনি আমাদের অতি কাছের এক ঋষি । কে বলুন তো তিনি ?

বাকি মস্তকগুলির থেকে দীর্ঘ দাড়ি ও লম্বা কেশ সম্পন্ন সকল মুনি ও সাধুগুলির উৎপত্তি । সাধারন তপস্যা ও অসাধারন তপস্যার উদাহরন এরা সকলে । এরা সকলেই লম্বাকৃতি মুখাবয়ব ও উন্নত নাসা সম্পন্ন ।

বন্ধুগন , সৃষ্টিকর্তার ওপর আমার গবেষণাকে আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম রূপক কাহিনী হিসাবে , এর বাস্তবতা আপনাদের মিলিয়ে দেখতে হবে । সময় এসে গেছে । সৃস্টির সমতা বজায় রাখতেই লীলা।

Comments

Popular posts from this blog

A Memorable Marriage

DEATH OF BHOKU- My Pet Parrot

Basics of Drawing (technique)