আমি সেই মা (অলৌকিক কাহিনী)


 এক যে ছিল রাজ্য । সেখানে ছিলেন এক ধর্মপ্রাণ মহিলা । মানুষের সমস্যায় তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন । মানুষের চিন্তাভাবনা , সুকর্ম , কুকর্ম  কিভাবে জীবনকে প্রভাবিত করে তা নিয়ে ছিলো তার গভীর বিবেচনা ।

বয়স মাত্র ১৬ হতেই বিবাহ হয়ে গেলো তার । সংগীত নিবেদিত প্রান এক সুদর্শন পুরুষের সাথে । অত্যন্ত গরীব ঘরের এই মানুষটি সেই ধর্মপ্রাণ মহিলাকে সাদরে আমন্ত্রন জানালেন নিজের জীবনে । ঈশ্বরের প্রতি পরম আস্থাশীল সেই স্ত্রী ছিলেন নিখুঁত গানিতিক বিচার ও জ্যোতিষশাস্ত্রে পটু । কোনোরকম প্রথাগত শিক্ষা ছাড়াই জ্যোতিষের নির্ভুল গননায় তিনি বলে দিতেন মানুষের অতীত ও বর্তমান । কিন্তু মনভোলানো ভবিষ্যতবাণী করতেন না কখনও ।

সেই স্ত্রীর জীবনে যখন মাতৃত্ব এলো , জন্ম হোল এক ফুটফুটে শিশুকন্যার । সেই কন্যার জন্মের পর ছয় ষষ্ঠীর দিন ভোর বেলায় তার মাথার বালিশের নীচে পাওয়া গেলো একটি ছোট লোহার ত্রিশুল ও একটি ধানের ছড়া । প্রলয় ও সৃজনের চিন্হ স্বরূপ । বিধাতার দেওয়া সেই আশীর্বাদ পেয়ে স্তম্ভিত হোল সারা পরিবারের লোকজন । সন্তর্পণে তা তুলে রাখল একটি কাগজের মোড়কে , আলমারির লকারে ।

 কন্যা বড় হওয়ার সাথে সাথে  সেই ঘটনাটি জানতে পারলো তার মাতার কাছ থেকে । বয়স যত বাড়ল , ততই গভীর হোল তার চেতনা । একসময়ে নিজেই নিজের জন্ম বৃত্তান্ত সে তুলে ধরলো তার মাতার কাছে । সেই কন্যা উপলব্ধি করলো , তার মাতা কোন সাধারন নারী নয় । পূর্বজন্মে রাজবংশে জন্ম নেওয়া এক  ধর্মপ্রাণ রাজকুমারীর পুনর্জন্ম তিনি । সেই রাজকুমারীর নির্ভুল গানিতিক বিচার ও ছড়ার দ্বারা জ্যোতিষ বিচার তাকে খ্যাত করেছিলো সারা দেশে । দানধ্যান , গননা , আর ঈশ্বরের চিন্তায় মগ্ন থাকতেন সেই রাজকুমারী । পরবর্তী জন্মেও এর ব্যাতিক্রম হোলো না । এ যেন সাক্ষাৎ মা দুর্গার লীলাখেলা ।

কিন্তু সমাজের চাপে নিষ্পেষিত হতে হতে একসময় নিজের জিহবা ত্যাগ করে জীবন দিতে হোল তাকে । অতিনির্ভুল গণনা মেনে নিতে পারলো না পুরুষতান্ত্রিক সমাজ।

এরপর কন্যাটির উপলব্ধি আরও গাঢ় হোল । তার বক্তব্য সে প্রকাশ করলো  পিতা ও মাতার কাছে।কিন্তু এই ধরনের ব্যাখ্যা কে তারা বিশ্বাস করে উঠতে পারলেন না সহজে । স্বভাবিক কারনেই তারা দ্বারস্থ হলেন মনঃচিকিৎসকের । অল্প একটু ওষুধ গ্রহন করতে হোল সেই কন্যাকে । চরম বাস্তবের সাথে যোগস্থাপনের জন্য । সে বুঝতে পারলো তার নিজের জন্মের পিছনেও লুকিয়ে রয়েছে এক অলৌকিক কাহিনী -

পাশ্চাত্যদেশের এক প্রতিভাশালী জ্যোতিষী , অসাধারন দূরদর্শিতার জন্য যিনি বিশ্ববন্দিত । তারই বিদেহী আত্মা নিজের পুনর্জন্ম কামনা করেছিলেন এই মাতার গর্ভে । কোন এক শুভ মুহূর্তে তিনি প্রবেশও করছিলেন মাতৃগর্ভে । সন্তানের ভ্রূণশরীর তৈরি হয়নি তখনও ।

কিন্তু বিধাতার ইচ্ছে ছিল অন্যরকম। তাই সেই আত্মাভ্রূন যথাসময়ে প্রতিস্থাপিত হোলো প্রবল ইচ্ছাময়ী এক নারীশক্তির উত্থানে । সেই নারীশক্তি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলো মাতৃগর্ভে । তারপর জন্ম নিলো সেই কন্যা , যার জীবন এখনও বয়ে চলেছে খরস্রোতা নদীর মত প্রবল সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ।

নানান লড়াইয়ের মধ্যে দাঁড়িয়েও সেই স্ত্রী , সেই মা প্রবল ধৈর্যের পরীক্ষায় হলেন উত্তীর্না । সৎ চিত আনন্দের সঙ্গে বলে উঠলেন -" আমি সেই মা "!



  

Comments

Popular posts from this blog

A Memorable Marriage

DEATH OF BHOKU- My Pet Parrot

Basics of Drawing (technique)