নতুন এক দৃষ্টি (নাটিকা)
প্রথম দৃশ্য -
( ক্লাসরুম , স্পেশাল স্কুল )
দুজন টিচার বসে আছেন , একজন ছাত্রী নিয়ে । বৃষ্টির দিন , তাই বেশি ছাত্র ছাত্রী আসতে পারে নি । লিলি একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু , সে কথা বলতে পারে না ।
১ম টিচার - " বলতো লিলি , ফুলের ছবি কোথায় আছে ? "
লিলি আঙুল তুলে ফুলের ছবি দেখায় ।
২য় টিচার -" ভেরি গুড , আচ্ছা লিলি , তুমি কিসে করে স্কুলে আসো বলতো ?"
লিলি গাড়ির ছবির দিকে আঙুল দেখায় ।
এরপর লিলি জল খেতে চায় । জলের বোতল দেখায় ও মুখ দিয়ে আওয়াজ করে ।
১ম টিচার- " যাও লিলি , তুমি নিজে গিয়ে জল খেয়ে এসো বোতল থেকে ।"
লিলি উঠে যায় ও তার নিজস্ব ভঙ্গী তে জল খেতে যায় । কিন্তু কিছু টা জল পড়ে যায় বোতল থেকে ।
২য় টিচার - " মাসি কে ডাকবো ? লিলি জল ফেলে দিয়েছে ।"
১ম টিচার - " না থাক , ও নিজেই মুছবে , এগুলো শেখা জরুরি , স্বাবলম্বী হওয়া উচিত ওদের । যাও লিলি ন্যাপকিন নিয়ে জল মোছ , মাসি কে লাগবে না , আমি সঙ্গে আছি ।"
লিলি মিষ্টি হেসে ন্যাপকিন টা হাতে নেয় , জল মুছে তার সে কি আনন্দ , একটা কাজ করতে পেরেছে সে । দুজন টিচার ই তার প্রশংসা করে ।
লিলি নিজের জায়গায় গিয়ে বসে ।
১ম টিচার -" চল লিলি , কাগজ দিচ্ছি , আজ বৃষ্টির দিন , তোমার বন্ধু রা আসেনি , তোমাকে পেপার বোট বানানো শিখিয়ে দিই । "
২য় টিচার ( কাগজ নিয়ে আসে ) ।লিলি প্রবল উৎসাহের সাথে পেপার বোট বানানো শিখতে শুরু করে ।
-" দ্যাখো এই ভাবে ভাঁজ করবে , একটা ভাঁজ দেখিয়ে দিলাম , এবার তুমি করো ।" এভাবেই কয়েক স্টেপ এগিয়ে তৈরি হয় পেপার বোট ।
লিলি- ( কথা বলতে পারে না , কিন্তু বেজায় খুশি হয় ) হাত পা নেড়ে আওয়াজ করে তার আনন্দ প্রকাশ করে । পেপার বোট হাতে নিয়ে নাচতে থাকে ।
১ম টিচার - " আজ একটু খাতায় লিখবে লিলি ? চলো এ , বি , সি , ডি লিখি । কিন্তু লিলি রঙের দিকে আঙুল দেখিয়ে বুঝিয়ে দেয় সে লিখতে নয় , কালারিং করতে চায় ।
২য় টিচার -" ঠিক আছে , আমি ড্রয়িং খাতায় ছবি এঁকে দিচ্ছি , তুমি কালারিং করো লিলি ।"
লিলি কালারিং করতে শুরু করে , করতে করতে হঠাৎ ই রঙের বাক্স টা ছুঁড়ে ফেলে লিলি । রঙ পেন্সিল গুলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে ।
২য় টিচার -" কি ? কি হয়েছে লিলি ?"
১ম টিচার - " আহা , ব্যাস্ত হোয়েও না । হয়তো রেগে গেছে কোন কারনে । "
১ম টিচার লিলির মাথায় হাত বুলিয়ে দেন -" গুড গার্ল , বলতো লিলি কি হয়েছে , খিদে পেয়েছে ?"
লিলির চোখে জল । লিলি আঙুল দিয়ে খাতার দিকে দেখায় , খাতায় একটা কলা র ছবি আঁকা ।
২য় টিচার - " আগের পাতায় আপেল টা তো ঠিক করেই কালার করলো , তাহলে কলা দেখে রেগে গেলো কেন ?"
১ম টিচার- " লিলি , চলতো , লক্ষী মেয়ে , রঙ গুলো গুছিয়ে তোল । আজ তোমাকে কলা খেতে হবে না ।" লিলি আস্তে করে চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে রঙ গোছাতে শুরু করে । এর মধ্যে ১ম টিচার লিলির ব্যাগ খুলে , ২য় টিচার কে দেখায় । টিফিন বাক্সে কলা রয়েছে ।
২য় টিচার -" হ্যাঁ , আমি ও লক্ষ্য করেছি , ওকে বাড়ি থেকে রোজ কলা দেয় টিফিনে । রোজ কি কারুর কলা খেতে ভালো লাগে ? রাগ তো হবেই । সেজন্যই ওইভাবে রঙ গুলো ছুঁড়ে ফেলে দিলো ।
১ম টিচার -" এ ব্যাপারে আমি লিলির মা এর সাথে কথা বলবো । লিলির টিফিন পালটানো দরকার ।
২য় টিচার - " আমার কাছে নোনতা বিস্কুট আছে , আমি লিলি কে আজ নোনতা বিস্কুট খাওয়াবো , ওর ভালো লাগবে ।"
ইতিমধ্যে লিলি রঙের বাক্স গুছিয়ে প্রথম টিচারের হাতে দেয় । টিচার আদর করে বসায় লিলি কে । ২য় টিচার ব্যাগ থেকে বিস্কুট বার করে লিলি কে দেয় । লিলি অত্যন্ত আনন্দের সাথে তা খেতে শুরু করে ।
১ম টিচার - " দেখলে তো ? ওদের নিয়ে যদি আমরা গভীর ভাবে চিন্তা করি , ওদের বুঝি ,তাহলেই ওরা শান্ত থাকে ।"
২য় টিচার -" ঠিক বলেছেন , সত্যি আপনার থেকে অনেক কিছু শেখার আছে , আপনি সিনিয়র ।"
১ম টিচার -" আর তুমি যে ওকে ভালোবেসে নিজের বিস্কুটের ভাগ দিলে, ওর স্বাদবদল করলে , এটাও মানবিকতার একটা দিক । এই ভাবেই ওদের আমরা আমাদের সমাজে অঙ্গীভূত করতে পারি ।
ততক্ষণে লিলি খাতায় নীল রঙ দিয়ে জল এঁকে , তার ওপর পেপার বোট টা আঠা দিয়ে লাগিয়ে ফেলেছে , সে এবার টিচার দের তার কাজ দেখায় ।
দুজন টিচারই চমকে ওঠেন , লিলির মধ্যে এতো সৃজনশীলতা লুকিয়ে ছিল ? সামান্য একটা পদক্ষেপ মুহূর্তে কতটা পাল্টে দিলো লিলি কে।
শেষ দৃশ্য -
দুজন টিচার দুপাশে , মাঝখানে লিলিকে নিয়ে এগিয়ে আসে টেবিল থেকে স্টেজের সামনের দিকে ।
(স্পট লাইট ওদের তিনজনের ওপর )
১ম টিচার ( দর্শক দের উদ্দেশ্যে , লিলির হাত ধরে পেপার বোটের পাতা টা তুলে দেখায় )- " দেখুন , একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর মনো বিকাশ সম্ভব কিনা ! "
২য় টিচার - " আজ সত্যি ই নতুন এক দৃষ্টি পেলাম , লিলি কে দেখে বুঝলাম , আমাদের মতো ওরাও একঘেয়েমির শিকার হয় । আসুন না , আমরা ওদের নিয়ে আর একটু বেশী ভাবি! "
ওনারা দুজনেই দর্শক দের উদ্দেশ্যে প্রণাম জানান ।
Comments
Post a Comment