বনের ধারে,মনের কোনে( ভৌতিক কাহিনী )
- এই হোল দিনের বেলার বর্ণনা । কিন্তু রাত নামতেই পালটে যায় এই পরিবেশ । ঝিলের সব পাখি উধাও হয়ে যায় । কিন্তু তবুও শোনা যায় বন্দুকের আওয়াজ । শিকারি রা শিকার করতে আসে এই জঙ্গলে ।মাঝরাতে ডাইনি যাদুকরী দের আনাগোনা এই ঝিলে , পাহারে, জঙ্গলে - যেন মায়াবী কোন দেশ । রুপকথার গল্পে আমরা যেমন রাজপুত্র রাজকন্যা দের কথা শুনি, তেমনি ডাইনি যাদুকরী দের কথাও শুনি ।এই জঙ্গলেই থাকতো বাবা ইয়াগা নামে এক ডাইনি । যাদুবিদ্যায় সে সকল কে বশ করে রাখতে পারতো । হঠাৎ একদিন সেই বনে এলো এক রাজপুত্র । কোন সে অচিন দেশ থেকে এলো সে কে জানে ? ডাইনি বাবা ইয়াগা এক রাজার কন্যা কে হরণ করেছিলো, তাকে উদ্ধার করতে ।
- এই টুকু গল্পই পিয়া শুনছিল ঠাকুমার মুখ থেকে । আসলে পিয়া ছোট থেকেই গল্প শুনতে ভালোবাসে । তার ঠাকুমা তাকে নানান রুপকথার গল্প শোনায় । একদিন মাঝরাতে পিয়ার ঘুম ভেঙ্গে যায় । সে জেগে উঠলো । ঠাকুমা তো কখন পিয়া কে গল্প শোনাতে শোনাতে ঘুমিয়ে পড়েছেন । পিয়া শুয়ে রইলো জেগে । হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ ! "কে এলো এতো রাত্রে ?" পিয়া শুয়ে শুয়ে ভাবে । "দরজা কি খুলবো ?"-ভয় পায় পিয়া , সে ঠাকুমাকে ডেকে দেয় । ঠাকুমার কাছেই শোয় সে । বাবা আর মা আলাদা ঘরে অঘোরে ঘুমোচ্ছেন । ঠাকুমা জেগে উঠে ভয়ার্ত সুরে বলেন -" দাঁড়া রে , তোর বাবা কে ডাকি ।"
বাবা উঠে দরজা খুলল । কই কেউ তো নেই বাইরে । বাবা ঘুমের চোখে বিরক্ত হয়ে বলল -" কি যে তোমরা বল না ? এত রাত্রে কে আসবে ? দিনরাত আজগুবি সব গল্প শোনাও পিয়া কে , তাই বোধহয় ও ভুল শুনেছে ।"-এই কথা বলে বাবা আবার ঘুমিয়ে পড়লো । কিন্তু পিয়া স্পষ্ট শুনেছে ৩ বার কলিং বেল বাজার আওয়াজ । কাল সকালে বাবা মালদা যাচ্ছেন , ফিরবেন ৭ দিন পর । বাড়ি তে মা আর ভাই থাকবে । পিয়ার ঠাকুমার একটা চোখে ছানি অপারেশান করাতে হবে । তাই ঠাকুমা কে নিয়ে মালদা যাবেন বাবা । পিয়া রা থাকে শিলিগুড়ি তে। এই সাতদিন পিয়া ঠিক করেছে মা এর কাছে বায়না ধরবে গল্প শোনার ।
পরদিন সকালে বাবা রওনা হোল ঠাকুমা কে নিয়ে । যথারীতি পিয়ার মন খারাপ । সেদিন রাত্রে মা আর ভাই এর সাথে ঘুমাতে গেলো সে । মা তাকে গল্প শোনাতে শোনাতে ঘুমিয়ে পড়লো । মাঝরাতে আবার দরজায় শব্দ ! পিয়া এবার ভয় পেয়ে মা কে আর ভাই কে ঘুম থেকে ডেকে তুলে দিলো ।পিয়ার মা তো যথারীতি পিয়া কে বকুনি দিলো -" দিনরাত রূপকথার সব গল্প শুনবি আর রাত্রে জেগে থাকবি ,কেউ আসেনি দরজায় ,তুই এখন ঘুমো ।" বলে মা ভাইয়ের দিকে ফিরে ঘুমিয়ে পড়লো । কিন্তু তার পর দিন পিয়া আর সেই শব্দ টা শুনতে পেলো না ।কিন্তু আবার একদিন রাত্রে একই ভাবে দরজায় কড়া নাড়ল কেউ । পিয়া এবার ভাই কে ডেকে তুল লো , কিন্তু তারা দুজনে কেউ ই কাউকে দেখতে পেলো না ।- পরপর তিনদিন এইরকম হোল । ওই আওয়াজ টা পিয়া ছাড়া আর কেউ কেনও শুনতে পায়না ?-পিয়া অবাক হয়ে ভাবে । কেমন অদ্ভুত লাগে তার ! বাবা আর ঠাকুমা মালদা গেছেন দুদিন হোল , আর ৫ দিন পরই ওদের ফেরার কথা ।
পিয়া ঠিক করেছে, বাবা আর ঠাকুমা বাড়ি ফিরলে সব কথা খুলে বলবে । এইভাবে ৫ দিন কেটে গেলো । ,পিয়া রোজ শুনতে পায় আওয়াজ টা । কিন্তু কাউকে ডাকে না । কেউ পাত্তাই দেয়না । আর দেবেই বা কেন ? দরজা খুললে তো কাউকে দেখা যায় না !
বাবা একদিন সকালে ফোন করলেন ! অপারেশন করাতে গিয়ে ঠাকুমা হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন ।বাবা একাই ফিরছেন মালদা থেকে । শুনে পিয়া কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো । তাকে গল্প শোনানোর আর কেউ নেই ! মা আর ভাই এর চোখেও জল ।
তোমরা নিশ্চই জানতে চাও, পিয়ার ঠাকুমা মারা যাওয়ার আগে কে আসতো ওদের দরজায় ? যিনি আসতেন তিনি হলেন পিয়ার ঠাকুরদার আত্মা । তিনি দেখা দিতেন না । হয়তো পিয়ার ঠাকুমার চলে যাবার সময় হয়েছিলো বলেই তিনি আসতেন পরলোক থেকে, সে কথা জানান দিতে , ঠিক তার সাতদিন পরেই ঠাকুমার মৃত্যু হোল ।
- নাহ, দরজায় কে আসতো তাই নিয়ে প্রশ্ন করেনা কেউ । কিন্তু পিয়া বুঝতে পারে নিশ্চই কোন রহস্য লুকিয়ে আছে এর পেছনে । ঠাকুরদার কথা তার মনে নেই , সে জানতেও পারে না যে দরজায় ঠাকুরদা আসতেন ঠাকুমা কে নিতে ।কিন্তু পিয়া বুঝতে পারে ঠাকুমার আশীর্বাদ রয়েছে তাদের সঙ্গে । রাত হলেই পিয়া তার ঘরে ঠাকুমার অস্তিত্ব অনুভব করে। আনন্দে মন ভরে যায় তার ।
Comments
Post a Comment