পোড়ো বাড়ির রহস্য ( ভৌতিক কাহিনী )



দুই বন্ধু জন আর ফ্রেড । দুজনেই খুব সাহসী , গিয়েছিলো পাখি শিকার করতে , জঙ্গলের ধারে । অনেকদিন আগের কথা বলছি । এই গল্পটা ভারতবর্ষের নয় । বিদেশের । জন আর ফ্রেড দুজনেই ব্রিটেনের ছেলে , পড়াশুনায় তারা যেমন ভালো তেমনি ওরা শিকার করতে ওস্তাদ।

জঙ্গলে জঙ্গলে শিকার করে বেড়াতে ওরা ভালোবাসে । এমন বহু জায়গায় বহুবার একসাথে রাত কাটিয়েছে ওরা । শিকার করতে গিয়ে এবার যে জঙ্গল টায় ওরা গেলো সেটা খুব গভীর জঙ্গল। পাহাড়ের কোল ঘেসে, সবুজে ঘেরা । দূর থেকে দেখলে আর চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করে না । জন আর ফ্রেড অল্পবয়েসি দুটি ছেলে । শিকার করতে করতে ওরা গভীর জঙ্গলের শেষপ্রান্তে চলে এলো । খেয়াল ই নেই । রাত তখন ১০ টা ।ঘন অন্ধকার । চাঁদের আলো ছাড়া সেখানে কোনও আলো নেই । নেই শহরের রাস্তার ইলেক্ত্রিক এর আলো ।

এমনি ভাবে হাঁটতে হাঁটতে ওরা দেখতে পেলো বড় একটা বাড়ি । বাড়িটার গা দিয়ে গাছপালা গজিয়েছে । দোতলা বড় বাড়ি । দেখে মনে হয় , কোনও সময় এ অঞ্চলের বড় নাম করা কোনও ব্যাক্তির বাড়ি হবে । কিন্তু এখন ভাঙ্গা বাড়ি হয়ে পড়ে আছে । জন আর ফ্রেড ঠিক করলো সেই রাত টা ওই বাড়ি তেই কাটাবে । ইচ্ছে হলেই তারা জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে যেতে পারতো । কিন্তু দুই বন্ধু ঠিক করলো , মজা করে তারা পোড়ো  বাড়িতেই রাত টা কাটাবে । সঙ্গে বাদাম আর ওয়াইন আছে , খেয়ে নেবে , শীতের রাত , জমিয়ে  গল্প করে কাটিয়ে দেবে । যেমন ভাবা তেমন কাজ । বন্দুক হাতে দুটি ছেলে ঢুকল সেই বাড়ি তে । বাড়ির নিচে হল ঘর । ধুলোয় ভরে গেছে ।চামচিকে বাদুড় বাসা করেছে ।ভেতরের ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে ওপরে যাওয়া যায় । দোতলায় উঠলো ওরা .৬ খানা বড়ো বড়ো ঘর খালি পড়ে আছে । ভগ্নপ্রায় অবস্থা । ধেড়ে ইঁদুর খেলা করে বেড়াচ্ছে । বাদুড় উড়ছে । একটা বড় ঘর বেছে নিয়ে ওরা ঢুকল সেখানে - এই ঘর টা বারান্দার শেষ প্রান্তে । একটা কাঠের চৌকি রয়েছে । খুবই খারাপ অবস্থা সেটার । দুই বন্ধু সারাদিনের ক্লান্তির পর বসলো সেইখানে । গা এলিয়ে দিলো । ফ্রেড বলল- " বাদাম আর ওয়াইন বার করে চল খেয়ে নি । খুব ঘুম পাচ্ছে । "

জন -" আমি তো ঠিক করলাম সারা রাত জাগবো । লোকে বলে পোড়ো বাড়ি তে ভূত থাকে , আজ তার ই পরীক্ষা নেবো । হা হা হা "-দুজনেই হেসে উঠলো ।  

কথায় কথায় রাত ১২ টা বাজলো । ফ্রেড আর জন, একটা করে বাদাম ভাঙছে আর খাচ্ছে , সঙ্গে ওয়াইন । ঠাণ্ডায় ওয়াইন খেলে সত্যি শরীর টা গরম থাকে ।এইভাবে কেটে গেলো কিছুক্ষণ । কথা বলতে বলতে দুজনে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেরাই টের পেলো না ।এ যেন মায়া ঘুম । জেদি দুটি বালক রাত জাগবে ঠিক করেও ঘুমিয়ে পড়লো । এমনিভাবে আরও দুঘণ্টা কেটে গেলো । রাত তখন ২ টা বাজে । এমনি তে বাড়ি টার বেশির ভাগ জানালা দরজা বন্ধ । কাঁচের জানালা দিয়ে জঙ্গলের অনেক টা দেখা যায় । দুই বন্ধু কাঠের চৌকি তে ঘুমিয়ে কাদা । আচমকা ঘরের ঘুলঘুলি দিয়ে একটা লালচে রঙের বাদুড় নিঃশব্দে ঘরে ঢুকল । বাদুড় টা ঘরে ঢুকতেই ঘরের আবহাওয়া যেন পাল্টে গেলো । ঘরের ইঁদুরগুলো আর নেই সেখানে, পালিয়েছে , চারিদিকে দমবন্ধ করা পরিস্থিতি । কিন্তু জন আর ফ্রেড এর ঘুম ভাঙছে না । বাদুড় টা আস্তে আস্তে মানুষের আকৃতি নিলো । কালো লম্বা কোট পরা এক মূর্তি ! এ কোন সাধারন বাদুড় নয় । ভ্যাম্পায়ার । রক্তচোষা ড্রাকুলা । ধীরে ধীরে সে হাঁ করলো । মোটা ছুঁচের মতো দুটো সাদা দাঁত তার মুখের দুপাশে । নিঃশব্দে সে এগিয়ে গেলো জন আর ফ্রেড এর দিকে । একে একে ঘুমন্ত দুই বন্ধুর গলায় কামড় বসালও ।রক্ত শুষে খেয়ে , আবার বাদুড়ের আকার ধারন করে এগিয়ে গেলো ঘুলঘুলির দিকে ।তারপর উড়ে গেলো নিজের রাজ্যে । রাত তখন ৩ টে । ঘুম ভাঙল জন আর ফ্রেড এর । ঘাড়ের কাছে অল্প ব্যাথা অনুভব করলো দুজনেই । তারপর কি যেন হোল , তাদের রক্তে কেমন যেন একটা শিহরন খেলে গেলো । দুজনেই উঠে দাঁড়ালো । কিন্তু একি অদ্ভুত পরিবর্তন ।ওরা দুজনেই দেখল যে ওরা ড্রাকুলা হয়ে গেছে । লম্বা ছুঁচের মতো দাঁত দেখা দিয়েছে মুখে ।  শরীর তা প্রথমে দুর্বল লাগলেও ক্রমে বল ফিরে পেলো ওরা । দুজনেই দুজনের দিকে তাকালও । ওদের শরীরে এখন রক্তের খিদে , তৃষ্ণায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে । 

আসলে ভৌতিক রহস্য গুলো সম্পর্কে জন আর ফ্রেড একেবারেই কিছু জানতো না । নিজেদের অজান্তেই চলে এসেছিলো ভ্যাম্পায়ার এর বাসায় ।

কিন্তু ওরা দুইজন মাতল এবার নতুন শিকারের নেশায় ! এবার আর বন্দুক নিয়ে পাখি মারা নয় । ওরা মানুষ খুঁজছে রক্ত খাবে বলে । কাল রাত্রে ঘুমের ঘোরে ওদের জীবন টাই পালটে গেছে ।দুটো জলজ্যান্ত সাহসী ছেলে একরাতে পরিণত হোল ড্রাকুলায় । কিন্তু এই জঙ্গলে ওরা মানুষ পাবে কোথায় ?  দুজনেই তাই অবাক হয়ে দুজন কে দ্যাখে আর মানুষের আশায় ঘুরে বেড়ায় জঙ্গলে ।

নাহ , এই জঙ্গল ছেড়ে ওদের আর বাড়ি ফেরা হোল না । ওদের রক্তে এখন ড্রাকুলার বিষ । কে জানে হয়তো এমন কোনও দিন আসবে , যখন কেউ এসে ওদের উদ্ধার করে বাড়ি তে ফিরিয়ে দেবে । কিন্তু বছরের পর বছর কেটে যায় , জন আর ফ্রেড ড্রাকুলা হয়েই ওই পোড়ো বাড়ি তেই রয়ে গেলো । সেই থেকে ওই বাড়ি টাকে লোকে অভিশপ্ত মানে । জঙ্গলে কাঠ কুড়োতে গিয়ে কোনও কোনও লোক জন আর ফ্রেডের শিকার হয়েছে । তারা লোক গুলির সমস্ত রক্ত শুষে খেয়ে নিয়েছে । 

এইভাবেই হারিয়ে যাওয়া দুটি ছেলের গল্প শেষ হয়ে গেলো । দুটি নিরপরাধ বালক মায়ের কোলে আর ফিরে আসতে  পারলো না ।

Comments

Popular posts from this blog

ONCE IN A SUNNY MORNING(Poem)

A Memorable Marriage

DEATH OF BHOKU- My Pet Parrot